মঙ্গলবার, ১০ জানুয়ারী, ২০১৭

ঐতিহাসিক শাহী মসজিদ কুসুম্বা।।

পৃথিবীতে এমন কিছু বস্তু রয়েছে যা মানুষকে অবাক বানিয়ে মনকে নিয়ে যায় চিন্তার গভীর অরণ্যে। মানুষ ভাবতে-ভাবতে ক্ষণিকের জন্য বিমোহিত হয়ে যায়। একের পরে এক প্রশ্ন আঘাত হানতে থাকে মনের মনি কোঠায় কে,কখন,কেমন করে,কেন? কিভাবে,কতদিনে এ বস্তু বানিয়েছিলো এমন কী এক প্রশ্নের বিষয় বস্তু হয়ে আজ অবধী দাঁড়িয়ে আছে নওগাঁ জেলার অন্যতম প্রধান গৌরবোজ্জল অতীতের স্মৃতিবাহী মান্দা উপজেলার “কুসুম্বা শাহী মসজিদ”।

ভৌগলিক অবস্থানঃ-“ঐতিহাসিক শাহী মসজিদ কুসুম্বা” মান্দা উপজেলা সদর প্রসাদপুর বাজার থেকে ৩কি.মি. দূরত্বে কুসুম্বা ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন রাজশাহী – নওগাঁ হাইওয়ে রাস্তার পার্শ্বে অবস্থিত। ট্রেন পথ না থাকায় মহাসড়ক পথেই পর্যটকরা আসে মসজিদটি দেখতে।
নির্মানকাল ও নির্মাতাঃ-সুলতানি আমলের পরবর্তীকালের একটি উৎকৃষ্ট এবং অন্যতম প্রধান স্থাপত্য নিদর্শন। মুর্শিদাবাদ জেলার ডি.এম শামসুর রহমানের লেখা ইতিহাস “মাহিনো” এর মাধ্যমে জানা যায়,৯০৭ হিজরীতে কুসুম্বা দীঘি খনন কাজ শুরু হয় এবং শেষ হয় ৯০৯ হিজরীতে। উত্তর – দক্ষিণ ৭৭.২৫ বিঘা প্রশস্ত হয়েছে। এই দীঘির পশ্চিম পাড়ে ফেলা মাটির উপর ৯১০হিজরীতে মসজিদ নির্মানের জন্য ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করেন আলাউদ্দিন হোসেন শাহ। নির্মান কাজ শেষ হয় ৯৬৬ হিজরীতে।
মসজিদের আকার-আয়তনঃ- অর্ধবৃত্তাকার ৬ গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদটির উত্তর-দক্ষিণ দৈর্ঘ্য ৫০ফুট, পূর্ব-পশ্চিম প্রস্থ ৪২ফুট। পূর্বদিকে তিনটি প্রবেশদার আছে এবং চার কোণে অষ্টকোন আকৃতির ৪টি গম্বুজ রয়েছে। যেগুলো সৌন্দর্য পিপাসুদের মন কেড়ে থাকে।
মসজিদটির নামকরণঃ- দীঘি খনন ও মসজিদ নির্মানের সময়ে দীর্ঘ সময় মসজিদের উত্তরে বিশাল ফুল বাগান ছিল বলেই কুসুম্বাগ থেকে কালক্রমে কুসুম্বা নামে নামকরন করা হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের পাঁচ টাকার কাগজের নোটে “ঐতিহাসিক শাহী মসজিদ” কুসুম্বার ছবি রয়েছে। এ ছাড়াও মসজিদের উত্তর পার্শে প্রকান্ড তেঁতুল গাছটি প্রকৃতির সৌন্দর্য বর্ধন করে থাকে।
প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অবহেলার শিকারঃ বগুড়া প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কুসুম্বা মসজিদটি অধিগ্রহণ করে নামমাত্র একটি সাইনবোর্ড টানিয়ে দায়িত্ব শেষ করেছে। এই মসজিদটির গম্বুজের খিলানে গোড়ার দিকে লোনা ধরে ইট খুলে যেতে বসেছে। একটি শেড নির্মান করা হলেও এখানে দর্শনার্থীদের জন্য নেই কোন বিশ্রমাগার। মসজিদের অনিরাপদ দূরত্বে ৫টি ইট ভাটা গড়ে উঠেছে। পর্যটকসহ গবেষকগণ এ অবস্থায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনসহ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষন করেন তারা। কিন্তু উদ্যোগ নেই প্রশাসন বা প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের।
সম্ভাবনাময় পর্যটন শিল্পঃ-কুসুম্বা মসজিদটিকে ঘিরে আকর্ষনীয় পর্যটন শিল্প গড়ে উঠতে পারে। এজন্য সরকারী উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন আগত পর্যটক হাসিনা,আলেয়া খাতুন লিপি,শামসুন্নাহার পপি,আব্দুল মান্নান, গোলাম সারোয়ার, মাহবুবুজ্জামান সেতু,শামসুজ্জামান সাজু,জোবয়ের হোসেন রুম্মান,মাহবুবা আক্তার শ্রাবণী,স্বর্নালী, সোহা এবং সামিহাসহ অন্যান্যরা । বিশাল দীঘির চারপাশ দিয়ে বিস্তার ঘটানো যেতে পারে এই শিল্পের। প্রতিদিন শত-শত দর্শনার্থীর পদভারে মুখরিত থাকে এর অঙ্গন । সম্প্রতি মসজিদের পশ্চিম পার্শ্বে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী ইমাজ উদ্দিন প্রামানিকের সহায়তায় ক্ষুদ্র পরিসরে একটি বিনোদন স্পট নির্মানের কাজ প্রক্রিয়াধীন এবং স্পটটি সকলের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। যা ইমাজ উদ্দিন প্রামানিক শিশু পার্ক নামে পরিচিত।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন